জঙ্গল এর নাম জঙ্গল জানোয়ার আছে এক দঙ্গল বাঘ মামা ধারে কাছে চুপ করে বসে আছে আচমকা ধরে নেবে ঘপ করে খেয়ে নেবে, খপ করে...
ভয় পাবেন না। আমরা কোন নরখাদক বাঘের অঞ্চলে গিয়ে পড়বো না। আসলে অরুণচলের পার্বত্য সৌন্দর্য্যের সম্পর্কে যত বলা হয় তার সিকিভাগও হয় না এখানকার জঙ্গলকে নিয়ে। অথচ অরুণাচল প্রদেশের ৬১ শতাংশের বেশি হল বনাঞ্চল। তাও আবার একই ধরনের জঙ্গল নয়। কোনটা ট্রপিক্যাল, কোনোটা সাব ট্রপিক্যাল, কোথাও বা টেম্পারেট, কোথাও পাইন আবার কোথাও অ্যালপাইন। ২০১৯ এর রিপোর্ট অনুযায়ী বায়ো ডাইভারসিটির বিচারে সবার উপরে অরুনাচল প্রদেশের নাম। তাই আজ আমাদের গন্তব্য পর্যটকদের বিচারে এখানকার সর্বোচ্চ জনপ্রিয় নামধাপা ন্যাশনাল পার্কে।
ভুটান ভারত সীমান্তে প্রায় ১৯৮৫ বর্গ কিলোমিটারের ও বেশি জায়গা জুড়ে আদিমতার গন্ধ মাখা ৫,০০০ এর ও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদে সমৃদ্ধ দুর্ভেদ্য বিশুদ্ধ নামধাপা জাতীয় উদ্যানে আপনি এমন কিছু পেতে পারেন যা আপনি শুধু ভারতবর্ষে কেন সারা পৃথিবীতে পাবেন না।
বাঘ মামাদের স্বর্গরাজ্য বলতে পারেন নামধাপেকে। একটি নয় দুটি নয় ,চার ধরনের বাঘ মিলবে এখানে এলে। টাইগার ,লেপার্ডের পাশাপাশি এই জঙ্গলে স্নো লেপার্ড এবং ক্লাউডেড লেপার্ড সহবস্থান। ভাবলেই কেমন রোমাঞ্চিত লাগে গহীন জঙ্গলের মাঝখানে আপনাকে হয়তো অলক্ষ্যে লক্ষ্য রাখছে এদেরই কোন একজন। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন ম্যান-ইটারের কোন কাহিনী পাওয়া যায় না নামধাপা কে ঘিরে।
এছাড়াও বলা বাহুল্য হস্তিকুল, কালো ভাল্লুক, নেকড়ে, বাইসন, সুবিদিত বহু প্রজাতির হরিণ ও বন বেড়াল, নানা ধরনের সরীসৃপ এবং বৃক্ষবাসী জন্তুর গৃহস্থলী এই নামধাপা।
বানর দেখতে হয়তো আমাদের জঙ্গলেও যেতে হয় না। কিন্তু বিরল হুলক গিবনসের দেখা কিন্তু এখানে ছাড়া ভূভারতেও আর কোথাও পাবেন না। ঠিক যেমন বিলুপ্ত প্রজাতির কিছু গাছ পিনাস মারকুসি অ্যভিয়াস দেলাভাবি বা ব্লু ভান্দার মত অর্কিড আপনি কেবল মাত্র এখানেই পাবেন। ছবিতে দেখা লাল চকোলেটের পশমী ওভোরকোটে আগামোড়া মোড়া ছোট্ট সুন্দর লাল পান্ডার হদিস ও এই নামধাপাতে মেলে।
এখানেই রয়েছে হোয়াইট উইংড উড ডাক, গ্ৰেট ইন্ডিয়ান হর্ন বিল বা স্নোয়ী থ্রোটেট ব্যবলার মত দুর্লভ সব পাখি সহ প্রায় ৪২৫ ধরেনের পাখি।
নামধাপা এলে অবশ্যই ঢু মেরে যান মিয়াও মিউজিয়াম ও মিয়াও মিনি চিড়িয়াখানায়। গভীর অরণ্যে ঘুরতে ঘুরতে যে প্রাণী গুলো আপনাদের চোখ এড়িয়ে যাবে তার তার মধ্যে কিছু অবশ্যই দেখতে পাবেন এই চিড়িয়াখানায়। আর জাদুঘর আপনাকে এই অঞ্চলের ইতিহাস, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, এখানকার উপজাতিদের জীবনধারা ছাড়াও এখানে বিভিন্ন পশুপাখির বিষয়ে নানা বিস্তারিত তথ্য দিয়ে আপনার অনুসন্ধিতসা মেটাবে।
জঙ্গল প্রেমী হন বা উদ্ভিদবিদ, পাখি নিয়ে উৎসাহ হোক বা বৃহৎ বন্য জন্তুতে, অধবা শুধুই যদি নির্জনতার সান্নিধ্যে অবাধ সবুজের ঘেরাটোপে, আলো আধারির গা ছমছমে রোমান্টিকতার এক আশ্চর্য স্বাদ পেতে চান তবে নামধাপার চেয়ে ভালো কিছু হয় না। তাই পরিচিত জঙ্গলগুলি ঘুরে বেড়াবার ফাঁকে একবার অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে চলে আসুন নামধাপায়। ভারতবর্ষের অনন্য জীববৈচিত্র্যকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে রোমাঞ্চকর চিরস্মরণীয় দুর্লভ এক অভিজ্ঞতা...© 2021, Easy Eco Tour. All rights reserved.
Comments